একটি আয়না
~তন্ময় দত্ত মিশু (রৌদ্দুর)
১
-“আজ গোমতলি ব্যাংকে দুপুরের দিকে ডাকাতি হবে”
-”হ্যালো হ্যালো, কে বলছেন?”
গোমতলি থানার ওসি কিছু বলার আগেই ফোনটা কেটে গেল। ওনি বুঝতে পারছেন না ফোনটা কে করল এবং কেনই বা এমন ইনফরমেশন দিল। খরবটা সত্য কিনা তাও বুঝে উঠে পারছেন না। এখন সকাল এগারোটা, যদি খরব সত্য হয়ে থাকে তাহলে হাতে বেশি সময় নেই। যা করার তাড়াতাড়ি করতে হবে। হোসেইনকে ডেকে জরুরি ভিত্তিতে মিটিং এর ব্যবস্থা করতে বলল ওসি সাহেব।
গোমতলী থানার মিটিং কক্ষে মিটিং শুরু হলো। মিটিংয়ে থানার সকল অফিসারকে ডাকা হলো। সবাই উদগ্রিব হয়ে বসে আছে। এমন হঠাৎ মিটিং ডাকার কারণ কি কেউ বুঝতে পারছে না। আলোচনা সমালোচনার জটলা শুরু হলো অফিসারদের মধ্যে। এমন সময়ে ওসি জনাব শাহাবুদ্দিন রুমে ঢুকলেন। সবাই তাকে দাড়িঁয়ে সম্মান জানালো। সবাইকে বসার ইঙ্গিত দিয়ে জনাব শাহাবুদ্দিন মিটিং আরম্ভ করলেন।
তিনি দাড়িঁয়ে থোকেই একটু আগের ঘটে যাওয়া ঘটনাটা সকলকে বললেন।
সকল অফিসার তার কথাগুলো মনোযোগ সহকারে শুনলেন কিন্তু ঠিক হজম করতে পারেননি। ওসি সাহেব সকল অফিসারে তাদের নিজস্ব কন্টাক্ট এর মাধ্যমে উক্ত খবরটার সত্যতা যাচাই করতে বললেন এবং এক ঘন্টার মধ্যে পুনরায় এ মিটিংয়ে উপস্থিত থাকতে বললেন।
জনাব শাহাবুদ্দিন নানা জায়গায় খোজখবর নিয়ে দেখলেন কিন্তু কোনো খবরই পেলেন না। আশায় আছেন অফিসারগন হয়তবা কোনো ক্লু পাবেন যার মাধ্যমে এ খবরের সত্যতা যাচাই করা যাবে।
ঠিক এক ঘন্টা পর সকলে মিটিং রুমে উপস্থিত হলেন। জনাব শাহাবুদ্দিন ও রুমে প্রবেশ করলেন। ওসি সাহেব হতাশ হলেন। কেউ কোনো খবর যোগাড় করতে পারেননি। কিছুক্ষণ আলোচনা হলো এ ব্যপার নিয়ে। কিন্তু কোনো লাভ হলো না। রহস্য রহস্যই রয়ে গেল। শেষে এটাকে নিছক ভুয়া খবর বলে এড়িয়ে যাওয়া হলো।
ওসি সাহেবের মন থেকে ঘটনাটা গেলো না। তিনি দুইজন কনস্টেবলকে ব্যাংকে পাঠিয়ে দিলন নিরাপত্তার জন্য।
দুপুর সাড়ে তিনটা, হঠাৎই খবর আসে গোমতলি ব্যাংক থেকে ২০ কোটি টাকা চুরি হয়েছে। পুলিশ যথাশীগ্রহ গোমতলি ব্যাংকে যায়। কনস্টেবল দুইজন বাহিরের ছিল। সিনিয়র অফিসার রাকেশ তাদের কাছ থেকে বিস্তারিত ঘটনা জানতে চায়। কনস্টেবল হাবিবুল আলম জানান যে তারা দুজন বাহিরে ব্যাংকের মূল ফটকে দাড়িঁয়ে ছিল। হঠাৎই ভেতর হতে চিৎকার শোনা যায়। তারা ছুটে যায় মূুহূর্তে। ক্যশিয়ার জানায় তহবিল থেকে ২০ কোটি টাকা উধাও। সিসি ক্যমমেরায় ধরা পরে দোতালার বড় গ্লাস ভেঙ্গে কেউ একজন লাফ দেয়।
এদিকে জনাব শাহবুদ্দিন ভিষন উদ্বিগ্ন। তিনি সকালের ঘটনাকে নিছক মশকরা বলে কেন ছেড়ে দিলেন। নাহলে হয়তবা এ চুরি আটকানো যেত। তিনি কিছুতেই নিজেকে ক্ষমা করতে পারছে না।
২
চুরি হয়েছে আজ এক মাস হলো। পুলিশ তন্ন তন্ন করে খুজেও, চোরকে খুজে পায় নি। জনাব একটা খুনের কেস নিয়ে বিজি আছেন। খুটিয়ে খুটিয়ে প্রমাণগুলো দেখছেন কোনো সূত্র পাওয়ার জন্য। রামুদা চা নিয়ে এল,সকাল এগারোটা বাজে। এমন সময়ে একটি কল আসলো অফিসের টেলিফোনে।
-”আজ সন্ধ্যে ছ’টা নাগাদ বেলাপুরের রামসিংহের সোনার দোকানে ডাকাতি হবে।”
-”হ্যালো হ্যালো আপনি কে বলছেন?”
ফোন কেটে গেলো। জনাব শাহাবুদ্দিন এবারো জানতে পারলেন না, ফোনটা কে করল। খুবি বিচলিত হয়ে পড়েছেন তিনি।
এবারে আর সময় নষ্ট না করে দুপুরের বেরিয়ে গেলেন বেলাপুরের দিকে। অর্ধশতক মানুষ আছে সাথে। কিছু মানুষ সাদা পোষাকে দোকানের চারপাশে নজর রাখবে। আর অন্যরা দোকানটা পুরো ঘেরাও করে রাখবে। ঘন্টাখানিকের মধ্যে পৌছে গেলেন বেলাপুরের রামসিংহের সোনার দোকানে।
দোকানের চারপাশে কড়া পাহাড়া দেওয়া আছে। দোকানের ভিতরেও কড়া পাহাড়া। ওসি সাহেব এবারে চোর ব্যাটাকে ছাড়ছেন না।
সময় ৫:৫৫, হঠাৎ করে সারা এলাকার কারেন্ট চলে গেলো। এদিকে আবার দোকানের জেনারেটর চালু হচ্ছে না। সময়টা শীতকাল হওয়াতে আরো খাবার অবস্থা হয়েছে। চারিদিকে ঘন অন্ধকার। অফিসারগন ওতপেতে বসে আছে।
সময় ৬:০৫, সব একইরকম আছে। পরিস্থিতি অনূকল। হঠাৎই সেঠ রামসিংহ লক্ষ করেন যে তার ক্যাশবাক্স খোলা। ভাবলেন ভুলবশত খোলা রয়ে গেছে। কিন্তু যখন ক্যাশবাক্স বন্ধ করতে গেলেন, জোরে চেচিয়ে উঠলেন। জনাব শাহবুদ্দিন গিয়ে দেখলেন পুরা ক্যাশবাক্স ফাঁকা! এ কিভাবে সম্ভব। জনাব শাহাবুদ্দিনের মাথায় আসলো না। পুরো স্টাপ স্থম্বিত। ক্যাশবাক্সে প্রায় পঞ্চাশ হাজার টাকা ছিল। এখন সবি উধাও।
জনাব শাহাবুদ্দিন এবারের ঘটনাটা কিছুতেই মেনে নিতে পারলেন না। নিজের উপর রেগে আছেন প্রচন্ডভাবে। কিছুতেই বুঝতে পারছেন না, চুরিটা কিভাবে হলো। আর ফোন করে কেইবা ইনফরমেশান আগের থেকে দিয়ে দেয়। এখন তার কক্ষের সব টেলিফোন টেপ করা রয়েছে। কেউ কল করলে তার লোকেশান সহজেই জানা যাবে।
সপ্তাহখানিক পার হয়েছে ঘটনাটার।তদন্ত এখনও চলছে। কিন্তু কোনো সুরাহা করতে পারি নি কেউ। সকাল এগারোটা জনাব শাহবুদ্দিনের নামে একটি পার্সেল আসে।
পার্সেলের ভেতরে নানা কাগজপত্র এবং একটি আয়না। জনাব শাহাবুদ্দিন কাগজপত্রগুলো ঘেঁটে পুরো অবাক হয়ে গেলেন। কাগজপত্রের সাথে একটি চিঠি পান যাতে লেখা-
“জনাব শাহাবুদ্দিন, আমার সালাম নিবেন। গত দুইবার আপনাকে আমিই ফোন করেছিলাম।প্রথমবার আপনি আমার কথায় পাত্তা দেন নি।দ্বিতীয় বারে বুদ্ধি হয়েছিল। আপনার কাজ আপনি করে গিয়েছেন,অবশ্যই ভালো। আপনাকে জানিয়ে রাখি গত দুটি চুরি বা ডাকাতি যাই বলুন, দোনোটা আমিই করেছিলাম। আপনি ভাবতে পারেন, আমি কে? আমি একজন সাধারন মানুষ।তবে আমি বাধ্য হয়েছি এমন কাজ করার জন্য। আপনার মনে পড়ে গত দুবছর আগে, গোমতলি ব্যাংক থেকে ২০ কোটি টাকা উধাও হয়ে যায় রাতারাতি। টাকাগুলো কোথায় গেছে কেউ জানে না কিন্তু আমি জানি। থাক সে কথা আর না বলি। কারন টাকাগুলো আমি আবার ফেরতও নিয়ে নিয়েছি এবং যার যার টাকা তাদের পৌছিয়ে দিয়েছি। এবার আসি বেলাপুরের রামসিংহের দোকান নিয়ে। রামসিং, নামে আর কাজে কোনো মিল নেই এই লোকটার। এক বছর আগে জালিয়াতি করে পঞ্চাশ হাজার টাকা সরিয়ে নিয়েছিল সে। তাই তাকে শিক্ষা দেবার জন্য আমার এমন কাজ করতে হলো। আমাকে খোজার চেষ্টা করবেন না। কখনো যদি আমায় দেখতে ইচ্ছা তবে, তবে আয়নাটি মুখের সামনে ধরে রাখবেন। আর হ্যাঁ, ভবিষ্যতে হয়তবা আবার কল করতে পারি আপনাকে কিন্তু ফোন টেপ করে কোনো লাভ হবে না।”
জনাব শাহবুদ্দিন বুঝতে পারছেন না কি করবেন। তবে তিনি পরবর্তী ফোনের আশায় থাকবেন অবশ্যই।
===========================